বিশেষ প্রতিবেদক :: কক্সবাজার জেলার অতিগুরুত্বপূর্ণ সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুই প্রার্থী প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কাউকে ছাড় দিতে নারাজ।
নির্বাচন ঘিরে পোস্টার, বিলবোর্ডে ছেয়ে গেছে কক্সবাজার পৌরসভাসহ সদর উপজেলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান। এ ছাড়া হাট-বাজার, চায়ের দোকান ও বিভিন্ন মহলের আড্ডায় জমে উঠেছে নির্বাচনী আলোচনা।সবার প্রশ্ন একটাই কে হচ্ছেন সদর উপজেলা পরিষদের নতুন চেয়ারম্যান।
নির্বাচন ঘিরে কক্সবাজার পৌরসভা ও সদর উপজেলার ৫টি ইউনিয়নের বিভিন্ন ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থীরা গণসংযোগের পাশাপাশি এলাকার উন্নয়নে নানান প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন।
তবে বিএনপি,জাতীয় পার্টি,জামায়াত সহ অন্য দলের নেতারা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রার্থী হিসেবে প্রচার-প্রচারণায় নেই।
জানা গেছে, আসন্ন কক্সবাজার সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে দুইজন হেভিওয়েট প্রার্থী লড়ছেন।
একজন হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক মেয়র মুজিবুর রহমান আর অপরজন হলেন কক্সবাজার পৌরসভার চারবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুল আবছার। এ নির্বাচন ঘিরে শুরুতে পাঁচজন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিলেও শেষে তিনজন নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। আগামী ৮ মে, ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।
দলের নেতা-কর্মী ও ভোটারেরা জানান, শুরুর দিকে মুজিবুর রহমানের অবস্থান ভালোই ছিল।কিন্তু বর্তমান চেয়ারম্যান কায়সারুল হক জুয়েল নির্বাচন থেকে সরে দাড়ানো, স্থানীয় সাংসদ,পৌর মেয়র, প্রভাবশালী এ কে এম মোজাম্মেল হক পরিবার এবং আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাকর্মীদের সাথে দুরত্বের কারণে মারাত্বক বেকায়দায় রয়েছেন তিনি।
এ কারণে তার নির্বাচনী প্রচার প্রচারনায় তেমন কেউ নেই বললেই চলে। এছাড়া সদর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দিতা করা এটি তার জন্য প্রথম অভিজ্ঞতা। সবদিক বিববেচনায় মুজিবুর রহমান ভোটের মাঠে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছেন।
তবে বিপরীত চিত্র পৌরসভার চারবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান নুরুল আবছারের। তার পক্ষে জোর প্রচারণা চলছেই। তাঁর হয়ে মাঠে নেমেছেন কক্সবাজার পৌরসভার বর্তমান মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাহমুদুল করিমসহ জেলা-উপজেলা আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকর্মী ও সুশীলসমাজ।
এছাড়া নুরুল আবছারের রয়েছে ২০০০ সালের সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচনের অভিজ্ঞতা। পাশাপাশি কক্সবাজার পৌর এলাকায় তার রয়েছে ১০ হাজারের অধিক নিরব ভোট ব্যাংক। সবদিক বিবেচনায় এ নির্বাচনে ভোটের মাঠে অনেকটাই এগিয়ে রেখেছে তাকে।
এদিকে সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাচন নিয়ে গত রোববার রাতে শহরের একটি মিলনায়তনে নুরুল আবছারের পক্ষে মতবিনিময় সভা ডাকেন মেয়র মাহবুবুর রহমান চৌধুরী। মাহমুদুল করিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় ঝিলংজা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান টিপু সুলতানসহ পৌরসভা ও পাঁচটি ইউনিয়নের সাবেক ও বর্তমান বেশ কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান ও কাউন্সিলর বক্তব্য দেন।
সভায় মেয়র মাহবুব বলেন, দুর্নীতি, দখল বাণিজ্য, লুটপাট ঠেকাতে নুরুল আবছারকে বিজয়ী করতে হবে। নুরুল আবছার যোগ্য লোক, তিনি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে মানুষ ন্যায়বিচার পাবেন। রোববার বিকালে শহরের পাহাড়তলীতে গণসংযোগ করেন নুরুল আবছার। তিনি বলেন, ৮০ শতাংশ ভোটার তাঁর সঙ্গে রয়েছেন।
এদিকে মুজিবুর রহমানের পক্ষে মাঠে নামেন কক্সবাজার শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলামসহ শহর আওয়ামী লীগের কিছু নেতা-কর্মী।
শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি নজিবুল ইসলাম বলেন, মেয়র থাকাকালে গত পাঁচ বছরে মুজিবুর রহমান কক্সবাজার পৌরসভার যেসব উন্নয়ন করেছেন, তা গত ৫০ বছরেও কেউ করে দেখাতে পারেননি। উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হলে পুরো উপজেলার রাস্তাঘাটসহ দৃশ্যপট পাল্টে নি যাবে। মুজিবুর রহমান মেয়র নির্বাচিত হওয়ার আগে ঝিলংজা ইউনিয়নের টানা ১৪ বছর ইউপি চেয়ারম্যান ছিলেন।
রোববার বেলা তিনটা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত শহরের ৭ ও ৮ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ করেন মুজিবুর রহমান। এ সময় কয়েকটি পথসভায় তিনি মেয়র থাকাকালীন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের তালিকা তুলে ধরেন। মাদক-সন্ত্রাস, অপরাধ বন্ধের পাশাপাশি ই ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আশ্বাস দেন তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেন, নুরুল আবছারের পক্ষে দলের বেশ কিছু নেতা প্রকাশ্য হলেও মুজিবুর রহমানের পক্ষেও জেলা আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ নেতাদের দেখা যাচ্ছে না। তাঁদের অনেকে বিভিন্ন উপজেলায় চেয়ারম্যান প্রার্থী হয়েছেন। কেউ আবার সংসদ সদস্য। তবে দলের একটি প্রভাবশালী মহল চাইছেন না মুজিবুর রহমান জিতে আসুক।
গত ২৩ এপ্রিল প্রতীক বরাদ্দ নিয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নামেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান কায়সারুল হক। শহরের প্রধান সড়কে তাঁর পোস্টার ও ব্যানার সাঁটানো হয়। কিন্তু গত শনিবার তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। এ সময় তিনি মুজিবুর রহমানের দুর্নীতি, লুটপাট ও ক্ষমতার দাপটের কথা তুলে ধরে তাঁকে প্রত্যাখানের অনুরোধ জানান।
মুজিব ও কায়সারুল সম্পর্কে আপন চাচাতো- জেঠাতো ভাই। কায়সারুল হকের বাবা ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এ কে এম মোজাম্মেল হক জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও কক্সবাজার পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত চেয়ারম্যান ছিলেন। কায়সারুল হকের বড় ভাই শাহীনুল হক বর্তমানে কক্সবাজার জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। কায়সারুল হক নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোয় লাভবান হচ্ছেন নুরুল আবছার।
প্রসঙ্গত,কক্সবাজার পৌরসভা ও পাঁচটি ইউনিয়ন নিয়ে সদর উপজেলার মোট ভোটার সংখ্যা ২ লাখ ২২ হাজার ৯৯৬ জন। ভোটকেন্দ্র ৮২টি। দলীয় নেতা- কর্মীরা জানান, শহরের ভোট নির্বাচনে বড় প্রভাব ফেলতে পারে। কক্সবাজার পৌরসভার ভোটার রয়েছেন ৬৭ হাজার ৫৭৭। সে দিক থেকে এই ভোটাররাই এবার বড় ভূমিকা রাখতে পারেন।
Posted ১:৩৮ পূর্বাহ্ণ | বৃহস্পতিবার, ০২ মে ২০২৪
coxbangla.com | Chanchal Das Gupta